নবীজি (সা.) মদিনায় দীর্ঘ ১০ বছর অবস্থান করেন। ফলে এই নগরীতে তাঁর পবিত্র স্মৃতির সম্ভার বেশ সমৃদ্ধ। কালের আবর্তনে বহু স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে গেলেও এখনো টিকে আছে তাঁর স্পর্শ পাওয়া অনেক কিছু। নিম্নে নবীজি (সা.)-এর এমন কিছু স্মৃতিচিহ্নের বিবরণ তুলে ধরা হলো—
১. মসজিদে নববী : মদিনায় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রধান স্মৃতিচিহ্ন মসজিদে নববী। পবিত্র এই মসজিদ ছিল মদিনায় নবীজি (সা.)-এর সব কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এই মসজিদের নির্মাণকাজে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন এবং মসজিদে নববীর প্রাঙ্গণেই তিনি এখনো শুয়ে আছেন। রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি মদিনাকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেভাবে প্রিয় করেছ মক্কাকে; বরং তার চেয়েও বেশি প্রিয় করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৮৯)
২. জান্নাতুল বাকি : জান্নাতুল বাকিকে নবীজি (সা.) মদিনাবাসীর কবরস্থান হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। এখানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র স্ত্রী, পরিবারের সদস্য এবং কয়েক হাজার সাহাবিকে দাফন করা হয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ি, ফকিহ, মুহাদ্দিস ও ইসলামের ইতিহাসের বরেণ্য ব্যক্তিদের এখানে দাফন করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতের শেষভাগে জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং তাদের মাগফিরাতের দোয়া করতেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২০৩৯)
৩. উহুদের শহীদদের কবরস্থান : উহুদের যুদ্ধে যে ৭০ জন সাহাবি ইসলামের জন্য জীবনোৎসর্গ করেন, তাঁদের যে স্থানে দাফন করা হয়েছে, তাকে ‘মাকবারায়ে শুহাদায়ে উহুদ’ বলা হয়। এটি মসজিদে নববী থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এখানে মহানবী (সা.)-এর চাচা হামজা (রা.)-কে সমাহিত করা হয়। নবীজি (সা.) মৃত্যুর আগের বছর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবর জিয়ারত করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০৪২)
৪. উরাইস কূপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করার পর যেসব কূপের পানি পান করেছেন তার মধ্যে উরাইস কূপটি বিশেষভাবে আলোচিত। কেননা এই কূপ মদিনায় প্রথম নির্মিত মসজিদে কুবার সন্নিকটে অবস্থিত। এই কূপে নবীজি (সা.)-এর মোহরাঙ্কিত আংটি পড়ে যায় এবং এই কূপের পারে বসে রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু বকর, ওমর ও উসমান (রা.)-কে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেন।
৫. স্মৃতিধন্য আরো দুটি মসজিদ : মসজিদে নববী ছাড়াও মদিনায় এমন দুটি মসজিদ রয়েছে, যার নির্মাণকাজ নবীজি (সা.)-এর যুগেই সম্পন্ন হয়েছিল। তা হলো— ক. মসজিদে কুবা : রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমনের পর সর্বপ্রথম এই মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মদিনার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত এই মসজিদের নির্মাণকাজে স্বয়ং নবী করিম (সা.) অংশগ্রহণ করেন। মসজিদ নির্মাণে প্রথম পাথরটি তিনিই রাখেন।
নির্মাণকাজ শেষ হলে তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করেন এবং কুবাবাসীর প্রশংসা করেন। নবনির্মিত মসজিদে প্রথম নামাজ তিনিই আদায় করেন। মহানবী (সা.) প্রতি সপ্তাহের শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন। কোরআনে মসজিদে কুবার প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত, সেখানে অবস্থান করা আপনার জন্য বেশি সংগত। সেখানে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা পবিত্রতা পছন্দ করে। আর আল্লাহ পবিত্র ব্যক্তিদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৮)
খ. মসজিদে ইজাবা : মসজিদে নববীর বর্তমান অবস্থান থেকে মাত্র ৫৮০ মিটার দূরে এবং মদিনার বিখ্যাত কবরস্থান বাকি থেকে ৩৮৫ মিটার দক্ষিণে অবস্থিত মসজিদে ইজাবা। ঐতিহাসিকদের বর্ণনা অনুযায়ী, বনু মুয়াবিয়া গ্রামে অবস্থিত এই মসজিদের নির্মাণকাজ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেই শেষ হয়েছিল।
হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন মসজিদে ইজাবাতে প্রবেশ করেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। দীর্ঘ সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। তিনি উম্মতের জন্য মোট তিনটি দোয়া করেন। যার দুটি কবুল হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭২৬০) লেখক : সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।